Skip to main content

সঙ্গীত ও বাদ্য ব্যবহার জায়েয — কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবি।

সঙ্গীত ও বাদ্য ব্যবহার জায়েয — কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবি।

কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবি আল মালেকি আল কুরতুবি (ওফাত ৫৪৩ হিজরি) সুনানে তিরমিযির ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেছেন। বিখ্যাত এই ব্যাখ্যাগ্রন্থের নাম 'আরিদ্বাতুল আহওয়াযি'।


গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ২২৫-২২৬ পৃষ্ঠায় তিনি গানবাদ্য নিয়ে লিখেছেন। আমরা এখানে তা অনুবাদ করে দিচ্ছি।


তিরমিযি নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন, 


আবু উমামার সুত্রে, নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : 


তোমরা গায়িকা দাসীদের ক্রয় করো না, তাদের বিক্রিও করো না, তাদেরকে গান শিক্ষাও দিও না। এই ব্যবসা ও এর দ্বারা অর্জিত অর্থ হারাম। আর এই গান নিষিদ্ধ করতেই নাযিল হয়েছে কোরআনের আয়াত "মানুষের কতক আছে যারা ফুর্তিমূলক কথাবার্তা ক্রয় করে ... " 


তিরমিযি যোগ করেছেন, "আলী বিন ইয়াযিদের এই বর্ণনা জয়িফ (দূর্বল)।"


কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবি আল মালেকি বলেন, 


আমাদের তাফসির গ্রন্থে দেখিয়েছি যে আয়াতের এই ব্যাখ্যাটি দূর্বল, আমরা সেখানে সঠিক ব্যাখ্যাটিও উল্লেখ করেছি। 


গায়িকা বাদী ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হবে কিনা তা নির্ভর করছে গানবাদ্য হারাম না হালাল তার উপর। প্রথমত, গান হারাম নয়। আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বাসায়, অন্যের বাসায় গান শুনেছেন। নিজ জীবদ্দশায় গানের আসরে উপস্থিত হয়েছেন।


এখন যদি নবি যুগের পর কেউ গানের সাথে বেহালা ( عود ) বাজিয়ে সুর তৈরি করে, তবে তার বিষয়টি আয়েশা ও আবু বকরের সেই ঘটনার অন্তর্ভূক্ত যা বুখারিতে আছে — আবু বকর বললেন 'আল্লাহর পয়গম্বরের ঘরে শয়তানের বাদ্যযন্ত্রের আসর?!' নবিজি জবাব দিলেন, 'তাদের দুজনকে ( গানবাদ্য ) করতে দাও, আবু বকর! আজ আমাদের ঈদের দিন। '


এর সাথে যদি তম্বুরা ( গিটার সদৃশ বাদ্য ) বাজানো হয়, তবে এর কারণে এটি হারাম হয়ে যাবে না।


এসব বাদ্যের সুর দূর্বলদের অন্তরকে আকৃষ্ট করে, মন প্রশান্তি লাভ করে, মাথা ঠান্ডা হয়। এই মানসিক চাপ সবার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। সুতরাং মন যদি গানবাদ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে শরিয়তের পক্ষ থেকে এর অনুমোদন আছে।


আমাদের মালিকি মাযহাবের সমস্ত আলেম বলেছেন :


" কোন দাসী কেনার পর যদি জানা যায় যে সে গায়িকা, তবে ব্যক্তির জন্য খিয়ার ( ক্রয় বাতিলের স্বাধীনতা ) আছে। যদি তাদের কাছে গায়িকা বিক্রি নাজায়েয হত, তবে তারা এই ক্রয়-বিক্রয়কে বাতিল ঘোষণা করতেন। খিয়ারের সুযোগ দিতেন না।


খিয়ারের সুযোগটাও কেবল এজন্যই দেয়া হয়েছে যে, গায়িকা বাদীর হেফাযত করা কষ্টকর, তাদের ইচ্ছা-অভিলাষ অনেক বেশি হয়। তাদের অনেক অনুচিত লক্ষ্য-মাকসাদ থাকে, তারা মেলামেশার অপেক্ষায় থাকে। গানের সাথে যুক্ত এসকল বিষয় রোধ করতেও খিয়ারের সুযোগ রাখা হয়েছে। "


( সমাপ্ত )

Image


Comments

Popular posts from this blog

মিউজিকের বিপক্ষে প্রচলিত কিছু হাদীসের জবাব।

নিচের লেখাটি আমার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীর সাথে হয়েছিল, তাই “তুমি” সম্বোধন ব্যবহার করেছি। প্রথমে আবু উমামার হাদীস নিয়ে কথা বলা যাক। হাদীস ১: তুমি নিচের হাদিসটি উল্লেখ করেছ। عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ. আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)। উত্তর : - এই হাদীস দয়ীফ জিদ্দান (অতি দূর্বল), এমন হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণ দেয়া জায়েয নয়। মিশকাতে এই হাদীস উল্লেখ করে গ্রন্থকার বলেন: رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَعلي بن يزِيد الرواي يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ “হাদীসটি আহমদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযি বলেছেন — এটি গরীর (একক সুত্রে বর্ণিত) হাদীস। আর বর্ণনাকারী আলী বিন ইয়াযীদ হাদীসে ...