Skip to main content

ইসলামী জীবনদর্শনের আলোকে সঙ্গীত : শায়খ মাহমুদ শালতুত।

 ইসলামী জীবনদর্শনের আলোকে সঙ্গীত : শায়খ মাহমুদ শালতুত।

আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম আল ইমামুল আকবার খেতাবপ্রাপ্ত গ্র্যান্ড শায়খ আল্লামা মাহমুদ শালতুত (১৮৯৩-১৯৬৩) তার ফাতওয়া সংকলনে সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে বলেছেন :

মানুষের কাছে আমার প্রত্যাশা যে তারা একটি মূলনীতির কথা সবসময় এই ধরণের হালাল-নাকি-হারাম জাতীয় মতপার্থক্যপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে মাথায় রাখবে —

আল্লাহ মানুষকে কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যার টানে মানুষ স্বাদপূর্ণ মনোরম বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ বিষয়গুলো তার অন্তঃকরণে বিশেষ প্রভাব ফেলে। যার মাধ্যমে তার মাঝে প্রশান্তি ও সস্তি আসে, সতেজতা ও সুস্থিরতা লাভ হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাঝে সেই প্রশান্তি প্রবাহিত হয়। যে কারণে মানুষের চিত্ত মনোরম দৃশ্য দেখে প্রশস্তি লাভ করে - সবুজের শ্যামশোভা, জলতরঙ্গময় নির্মল পানি, সুদর্শন চেহারা; এসব দেখে মানুষের প্রফুল্লতার পুষ্পগুলো ফুঁটে ওঠে। সুন্দর খোশবু তার দেহ ও আত্মাকে ভারহীন হালকা করে দেয়। মসৃণ কিছু স্পর্শ করলে তার মন জেগে ওঠে, খসখসে কিছুর স্পর্শে তা উবে যায়। অজ্ঞতার পর্দা উন্মোচন করে নতুন কিছু জানতে পারলে মানুষ তৃপ্তি লাভ করে। ঠিক একইভাবে মানুষের অন্তরে প্রোথিত আছে নানান পার্থিব কামনা ও সৌন্দর্য, যেমন পুরুষের অন্তরে উপস্থিত থাকে নারী ও সন্তানের প্রতি আকর্ষণ, রাশিরাশি সোনা-দানা, সারিসারি অশ্ব-ঘোড়া, উৎকৃষ্ট ও চিহ্নিত গবাদিপশু কিংবা ফসলি জমির প্রতি কামনা। মানবজীবনের অপরিহার্য বিষয়গুলো পরিপূরণ করাও হয়ত সম্ভব হত না, যেগুলো পরিপূরণ করতে আল্লাহ মানবকে সৃষ্টি করেছেন, যদি না তিনি মানুষকে এসব অনুভূতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি না করতেন। আল্লাহ চান যেন মানুষ এই কামনাগুলোকে কামনাকৃত বিষয়ের প্রতি ততটুকুই নিবিষ্ট রাখে যতটুকু তার প্রয়োজন এবং তার জন্য উপকারী। আর একারণেই খোদায়ি হেকমতের চাহিদা ছিল যে আল্লাহ মানুষকে এই অনুভূতি ও বৈশিষ্ট্য সহকারেই সৃষ্টি করবেন। এটা সম্পূর্ণ আকলবিরোধী বক্তব্য যে, আল্লাহ তাঁর ঐশী প্রজ্ঞা মোতাবেক আমাদেরকে অনুভূতিগুলো দিয়ে সৃষ্টি করার পর সেই তিনিই দাবি করবেন যেন আমরা এই অনুভূতিগুলো গোঁড়া থেকে উপড়ে ফেলি, হত্যা করে ফেলি, কিংবা একে নিবারণ করার জন্য সংগ্রামসাধনা করি! আর এ কারণে আসমানি ধর্মগুলোর লক্ষ্য কোন যুগেই এমনটা হওয়া অসম্ভব যে, মানুষ তাদের জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য অনুভূতিগুলোর বিলুপ্তি ঘটাবে।

হ্যাঁ, ঐশী ধর্মগুলোর এই অনুভূতি সংক্রান্ত বিষয়ে অন্য একটি লক্ষ্য আছে, আর তা হল লাগাম পরিয়ে সীমার ভেতর ধরে রাখা। সীমা বলতে এই অনুভূতিগুলোকে এমন মাত্রার মধ্যে রাখা যাতে করে একজন মানুষ তার দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে না যায়, তার চারিত্রিক অবক্ষয় না ঘটে এবং জীবনের অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক উচিত কাজগুলোর ব্যাপারে সে উদাসীন না হয়ে যায়। আর এটাই হল মানবীয় অনুভূতিগুলোর ব্যাপারে আসমানি ধর্মগুলোর অবস্থান। এটি একটি ভারসাম্য ও মধ্যমপন্থার অবস্থান। যাতে কোন বাড়াবাড়ি নেই, কোন ছাড়াছাড়ি নেই। বরং ঐশী ধর্মের লক্ষ্য হচ্ছে অনুভূতিগুলোকে শৃংখলাময় করা, গলা টিপে মেরে ফেলা নয়। এই মূলনীতিটা খুব ভালভাবে সবার বোঝা উচিত। আর ঐশী ধর্মের সকল লক্ষ্যকে এই নিক্তির পাল্লায় মেপে নেয়া উচিত। কোরআন বহু জায়গায় এই দিকে ইঙ্গিত করেছে, "তোমার হাতকে কাঁধের সাথে বেঁধে রেখো না, আবার পুরোদমে খুলেও দিও না", "হে বনি আদম! সেজদা ও উপাসনার জন্য সাজসজ্জা গ্রহণ করো। খাও, পান করো, তবে অপচয় করো না", "চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থী হও, বলার ক্ষেত্রে মৃদুভাষী হও"। সুতরাং শরিয়ত চায় মানুষ যেন তার অনুভূতির ডাকে মধ্যমপন্থায় সাড়া দেয়। শরিয়ত মানুষের অন্তর থেকে সম্পদের ভালবাসা উচ্ছেদ করতে নাযিল হয় নি, বরং এই অনুভূতির মাঝে ভারসাম্য আনতে নাযিল হয়েছে, যেন অপচয়ীও না হয়, কিপ্টেও না হয়। শরিয়ত মনোরম দৃশ্যাবলী কিংবা আকর্ষনীয় শব্দধ্বনির প্রতি কাজ করা অনুভূতির মূলোৎপাটন করতেও অবতীর্ণ হয় নি। এই বিষয়গুলোতে না আছে কোন ক্ষতি, না আছে কোন অপকার। শরিয়ত মানুষের দুঃখানুভূতি বিলুপ্তি করতেও নাযিল হয় নি। বরং একে এমন সুষম অবস্থায় নিয়ে আসতে নাযিল হয়েছে যাতে ব্যক্তির মনে আতঙ্ক ও অস্থিরতা থাকবে না। মানবীয় সকল অনুভূতির ক্ষেত্রে আসমানি শরিয়তের এটাই অমোঘ নীতি।

আল্লাহ মানুষকে আকলবুদ্ধি প্রদান করেছেন। দুনিয়াতে মানুষকে আকল দিয়ে পাঠিয়েছেন বলেই মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে তাঁর কাছে। মানুষকে জ্ঞানবুদ্ধি দান করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন সে তার অনুভূতিগুলোকে সুশৃংখল রাখে যেভাবে রাখতে শরিয়ত ও ধর্ম বলেছে। সুতরাং কোন মানুষ যদি সুন্দর কণ্ঠ কিংবা সুমিষ্ট আওয়াজের প্রতি অনুরক্ত হয়, চাই সেটা কোন মানুষের হোক কিংবা কোন জীবজন্তুর কিংবা কোন যন্ত্রের এবং তার মনে এটা রপ্ত করার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয় তবে সে তার অনুভূতিগুলোর হক আদায় করেছে। যদি সে তার ধর্মীয় কর্তব্যে অবহেলা না করে, চারিত্রিক সমুন্নতিতে কোন বিচ্যুতি না ঘটিয়ে এটা চর্চা করে, তবে সে নিজের অনুভূতিগুলোর মাঝে নিয়মশৃংখলা স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। সে সরল সঠিক পথেই চলছে। সে আল্লাহর কাছে যেমন সন্তোষভাজন, তেমনি মানুষের কাছেও সে প্রিয়। উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হল যে গানবাদ্য চর্চা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে যুবকদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত। যদি সে সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় এবং তার সকল বাধ্যবাধকতাকে ঠিকঠাক রাখে, তবে এটি এমন এক পদক্ষেপ ও অবস্থান যা তার মানবীয় স্বভাব থেকে উৎসারিত, আকলবুদ্ধি আল্লাহর শরিয়ত ও হুকুম অনুযায়ী যার বৈধতার হুকুম দেয়। আকলি এই হুকুম সেই শরিয়ত থেকেই নিঃসারিত হয় যেই শরিয়ত আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী আসমান থেকে নাযিল হয়েছে। আর ঐশী এই শরিয়ত মানুষ তার জীবনকে এভাবেই পরিচালনা করবে এমনটাই তার কাছে প্রত্যাশা করে।


والأصل الذي أرجو أن يتنبه الناس إليه في هذا وأمثاله مما يختلفون في حله وحرمته هو أن الله خلق الانسان بغريزة يميل بها إلى المستلذات والطيبات التي يجد لها أثرا طيبا في نفسه به يهدأ وبه يرتاح وبه ينشط وبه تسكن جوارحه فتراه ينشرح صدره بالمناظر الجميلة كالخضرة المنسقة والماء الصافي الذي تلعب أمواجه والوجه الحسن الذي تنبسط أساريره ينشرح صدره بالروائح الزكيه التي تحدث خفة في الجسم والروح وينشرح صدره بلمس النعمه التي لا خشونت فيها وينشرح صدره بلذة المعرفة في الكشف عن مجهول مخبوء وتراه بعد هذا مطبوعا على غريزة الحب لمشتهيات الحياة وزينتها من النساء والبنين والقناطير المقنطرة من الذهب والفضة والخيل المسومة والانعام والحرث


ولعل قيام الإنسان بمهمته في هذه الحياة ما كانت لتتم على الوجه الذي لأجله خلقه الله إلا اذا كان ذا عاطفة غريزة توجه نحو المشتهيات وتلك التي خلقه الله معه في الحياة ليأخذ منها القدر الذي يحتاجه وينفعه

ومن هنا قضت الحكمة الإلهية أن يخلق الإنسان بتلك العاطفة وصار من غير المعقول أن يطلب الله منه بعد ان خلقه هذا الخلق واودع فيه لحكمته السامية هذه العاطفة نزعها او إماتتها أو مكافحتها في أصلها وبذلك لا يمكن أن يكون من أهداف الشرائع السماوية في أي مرحلة من مراحل الإنسانية طلب القضاء على هذه الغريزة التي لا بد منها في هذه الحياة نعم للشرائع السماوية بإزاء هذه العاطفه مطلب آخر يتلخص في كبح الجماح ومعناه مكافحة الغريزه عن الحد الذي ينسى به الإنسان واجباته أو يفسد عليه أخلاقه أو يحول بينه وبين أعمال هي له في الحياة ألزم وعليه أوجب.

ذلك هو موقف الشرائع السماويه من الغريزه وهو موقف الاعتدال والقصد لا موقف الإفراط ولا موقف تفريط هو موقف التنظيم لا موقف الإماتة والانتزاع هذا أصل يجب أن يفهم ويجب أن توزن به أهداف الشريعة السماوية وقد اشار اليه القرآن في كثير من الجزئيات ولا تجعل يدك مغلولة الى عنقك ولا تبسطها كل البسط ، يا بني ادم خذوا زينتكم عند كل مسجد وكلوا واشربوا ولا تسرفوا ، واقصد في مشيك واغضض من صوتك . وإذن الشريعه توجه الإنسان في مقتضيات الغريزة إلى الحد الوسط وهي لم تنزل لانتزاع غزيرة حب المال إنما نزلت بتعديلها على الوجه الذي لا جشع فيه ولا إسراف وهي لم تنزل لانتزاع الغريزة في حب المناظر الطيبة ولا المسموعات المستلذة ما له ضرر فيه ولا شر . وهي لم تنزل لانتزاع غزيرة الحزن وان ما نزلت بتعديلها على الوجه الذي لا هلع فيه ولا جزع وهكذا وقفت الشريعة السماوية بالنسبة لسائر الغرائز .

وقد كلف الله العقل الذي هو حجته على عباده بتنظيمها على الوجه الذي جاء به شرعه ودينه فاذا مال الإنسان الى سماع الصوت الحسن أو النغم المستلذ من حيوان او إنسان او آلة كيفما كانت أو مال الى تعلم شيء من ذلك فقد أدى للعاطفه حقها واذا ما وقف بها مع هذا عند الحد الذي لا يصرف عن الواجبات الدينية أو الاخلاق الكريمة أو المكانة التي تتفق ومركزه كان بذلك منظما لغريزته سائرا بها في الطريق السوي و كان مرضيا عند الله وعند الناس .

بهذا البيان يتضح ان موقف الشاب في تعلم الموسيقى مع حرصه الشديد على أداء الصلوات الخمس في أوقاتها وعلى أعماله المكلف بها موقف كما قلنا نابع من الغزيرة التي حكمها العقل بشرع الله وحكمه فنزلت على إرادته وهذا هو أسمى ما تطلبه الشرائع السماوية من الناس في هذه الحياة .



Comments

Popular posts from this blog

মিউজিকের বিপক্ষে প্রচলিত কিছু হাদীসের জবাব।

নিচের লেখাটি আমার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীর সাথে হয়েছিল, তাই “তুমি” সম্বোধন ব্যবহার করেছি। প্রথমে আবু উমামার হাদীস নিয়ে কথা বলা যাক। হাদীস ১: তুমি নিচের হাদিসটি উল্লেখ করেছ। عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ. আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)। উত্তর : - এই হাদীস দয়ীফ জিদ্দান (অতি দূর্বল), এমন হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণ দেয়া জায়েয নয়। মিশকাতে এই হাদীস উল্লেখ করে গ্রন্থকার বলেন: رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَعلي بن يزِيد الرواي يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ “হাদীসটি আহমদ, তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযি বলেছেন — এটি গরীর (একক সুত্রে বর্ণিত) হাদীস। আর বর্ণনাকারী আলী বিন ইয়াযীদ হাদীসে ...